বিশেষ প্রতিনিধি,ঈশ্বরদী, ॥ রেলপথ মন্ত্রনালয়ের সচিব ফাহিমুল ইসলাম বলেছেন,লোকসানি খাত বাংলাদেশ রেলওয়ে দুই টাকা নয় পয়সা খরচ করে এক টাকা আয় করে ।ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের বাজেট বরাদ্দে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। চাহিদার তুলনায় বাজেট বরাদ্দ কম হওয়ায় প্রয়োজনীয় পরিমাণ সাপোর্ট দিতে পারছিনা। তবে নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে যে বরাদ্দ আছে তার মধ্যেও আমরা এই সেবা ধর্মী প্রতিষ্ঠান রেলের মাধ্যমে মানুষকে নানাভাবে সেবা দেবার চেষ্টা করে যাচ্ছি। নানা সমস্যায় জর্জরিত রেলের পাকশী বিভাগের বাস্তব সমস্যা সরেজমিনে পরিদর্শনে এসে রবিবার দুপুরে ঈশ্বরদী লোকোসেডে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন,রেলের জন্য লোকোসেড একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান যেখানে ইঞ্জিন ঘোড়ানোর জন্য একটি টার্ণটেবিল স্থাপন করা জরুরি। ইতিমধ্যএইবিষয় নিয়ে অবগত হয়েছি। এটা বাস্তবায়নেরজন্য যে বাজেটের প্রয়োজন তার ব্যবস্থা করা হবে।এছাড়াও লোকোসেডসহ অন্যান্য যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলোও জনস্বার্থে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের চেষ্টা থাকবে।
বস্তনিষ্ঠ তথ্য পাবার জন্য সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করে তিনি আরও বলেন,প্রধান প্রকৌশলীর সাথে বসে রেলগেটে ফ্লাইওভার করার বিষয়টি এবং কম খরছে বিকল্প হিসেবে রেলগেট টানেল নির্মানের বিষয় ও হার্ডিঞ্জব্রীজের উভয় পাড়ের ফেন্সিং নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা সাপেক্ষে কাজ করার চেষ্টা করা হবে।সরেজমিনে আসার বিষয়টি উল্লেখ করে সচিব বলেন,ভালভাবে বোঝার সুবিধার্থে সরেজমিনে এসেছি। রেলগেট থেকে পাকশী পর্যন্ত সড়ক এবং পাকশী বিভাগীয় অফিস এলাকার সকল সড়কের অবস্থা দেখার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শ করা হবে। ইতিমধ্যে দ্বিতীয় হার্ডিঞ্জব্রীজের নির্মাণের বিষয়টি আরসিপি আই এর মিটিংয়ে উপদেষ্টা মহোদয়ের উপস্থিতিতে পাশ করা হয়েছে।
তিনি বলেন,আমরা চেষ্টা করছি, তবে খুব তাড়াতাড়ি না। তবে যত দ্রুত সম্ভব, পাবনা থেকে ঢাকা পর্যন্ত একটি ট্রেন আগে দেব।
রেলপথ সচিব আরও বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে একটি লোকসানি খাত। দুই টাকা নয় পয়সা খরচ করে এক টাকা আয় করে রেল। তবে রেলওয়ে সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান সরকারের, তাই মানুষকে সেবা দিচ্ছি। সব দেশেরই যাত্রীবাহী ট্রেন লাভজনক হয় না, এটা লোকসানেই চলে। রেলওয়ের রাজস্ব আসে মূলত কনটেইনার ও মালবাহী ট্রেন থেকে। বর্তমানে শ্রমিক সংকট, কোচ স্বল্পতা ও লোকোমোটিভ স্বল্পতা আছে। তবে আমরা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।
তিনি আরও বলেন,‘রেল খাতকে লাভজনক করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। রেলকে শুধু যাত্রী পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে নয় বরং মালামাল পরিবহনের গুরুত্বপূর্ণ উপায় হিসেবেও গড়ে তোলা হবে।’ ভারত থেকে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা ২০০ কোচ আনব। ডিজাইন ফাইনাল হয়েছে, তারপর তারা বানিয়ে দেবে। এ বছরের শেষে ২০টি কোচ এবং আগামী বছরের মার্চে আরও ২০টি কোচ আসবে। এভাবে প্রতি মাসে কোচ আসবে। একটি ট্রেন চালাতে লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন), পাওয়ারকারসহ কমপক্ষে সাতটি কোচ লাগে। তাই বগিগুলো এলেই পাবনা-ঢাকা রুটে একটি ট্রেন চালানো শুরু করব।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে রেলপথ সচিব বলেন, ঈশ্বরদীর মাঝগ্রাম থেকে পাবনার ঢালারচর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণকালে পরিকল্পনা ছিল রাজবাড়ীকে কানেক্ট করে ওয়াই সেতু দিয়ে ঢাকায় নেওয়া। কিন্তু ওয়াই সেতুর নির্মাণ খরচ কার্যকর হবে না। এখন পরিকল্পনা হলো ঢালারচর থেকে পাচুরিয়া-রাজবাড়ী হয়ে পদ্মা ব্রিজে কানেক্ট করা। এতে একটি ব্রিজ লাগবে। আগামী চার-পাঁচ বছরের মধ্যে মানিকগঞ্জের কাছে রাজবাড়ীকে স্পর্শ করে একটি বড় ব্রিজ নির্মাণ করে ঢালারচরের সঙ্গে মানিকগঞ্জ হয়ে ঢাকা সংযোগ দেওয়া হবে। আমিন বাজার থেকে মেট্রো রেল হবে, তাই মেট্রো কানেকশনও ধরিয়ে দেওয়া হবে। ঢাকার চারপাশের জেলা শহরগুলোর মধ্যে শুধুই মানিকগঞ্জের সঙ্গে রেলের যোগাযোগ নেই। এখানে রেল সংযোগ খুব জরুরি।
এসময় পশ্চিমাঞ্চল রেলের জিএম ফরিদ আহমেদ, পশ্চিমাঞ্চল রেলের প্রধান প্রকৌশলী আহমেদ হোসেন মাসুম, পশ্চিমাঞ্চল রেলের প্রধান পরিবহণ কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ ভূ্ইঁয়া, পশ্চিমাঞ্চল রেলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা সুজিত কুমার সাহা, পশ্চিমাঞ্চল রেলের প্রধান টেলিকমিউনিকেশন কর্মকর্তা শাহিদুজ্জামান, পশ্চিমাঞ্চল রেলের প্রধান মেকানিক্যাল অফিসার সাদেকুল ইসলাম, পশ্চিমাঞ্চল রেলের প্রধান মেডিক্যাল অফিসার ডাক্তার মোঃ আনিসুল হক ও পশ্চিমাঞ্চল রেলের চীফ কমান্ডেন্ট জহিরুল ইসলাম এবং পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মীর লিয়াকত শরীফ, ডিসিও গৌতম কুমার,পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী এক আব্দুল হানিফ, পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী দুই নাজিব কায়সার,ডিএমই ক্যারেজ রবিউল ইসলাম, ডিএমই লোকো ময়েন উদ্দিন,ডিএসটিই রাজিব বিল্লাহ,ডিটিও হাসিনা বেগমসহ সকল বিভাগের কর্মকর্তাসহ লোকোসেডের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
রেল সচিব পাবনা শহরের বুলবুল কলেজের একটি মিটিং শেষ করে সড়ক পথে ঈশ্বরদী লোকোসেডে আসেন। লোকোসেড,ক্যারেজ,ঈশ্বরদী জংসন স্টেশন পরিদর্শন শেষে গ্যাংকারে পাকশীতে রওনা হন। ঈশ্বরদী রেলগেট থেকে পাকশী রেলওয়ে বিভাগীয় অফিস পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়কের বেহাল দশা পর্যবেক্ষণ করেন। বিকেলে তিনি পাকশীতে পশ্চিমাঞ্চল রেল ও পাকশী বিভাগের সকল কর্মকর্তাদের সাথে মত বিনিময় করেন।#
Leave a Reply