স্টাফ রিপোর্টার ঈশ্বরদ।। বুধবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউনিট-২ এর রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপন উদ্বোধন করায় ঈশ্বরদীর নিকটস্থ এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যে আনন্দ উৎসব লক্ষ্য করা গেছে।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউনিট-২ এর রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল
স্থাপনের এবং এর ফলাফল সম্পর্কে জানতে পেরে মানুষ একে অপরের সাথে আলোচনায় অংশ নেন। তারা একে অপরের মধ্যে বলাবলি করেন যে, রুপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র পাকশীতে হওয়ায় এলাকার চেহারার ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। বড় বড় বিল্ডিং হয়েছে বাসাভাড়া ব্যবসা, হোটেল, রেস্তরা, ব্যাংক বীমাসহ উন্নয়ন মূলক নানা কর্মকান্ড হওয়ায় পৃথিবীর অনেক দেশ এখন এক নামে চিনতে পারে, ঈশ্বরদীর পাকশীকে। প্রধান মন্ত্রীর এই
অনুষ্ঠানকে ঘিরে কয়েকদিন আগ থেকেই এলাকা মানুষের মধ্যে উৎসাহ লক্ষ করা গেছে। অনেকেই আক্ষেপ করে বলেছেন, আমার এলাকায় এত বড় প্রকল্প হচ্ছে অথচ আমরা দাওয়াত পাইনি।

অনুষ্ঠান স্থলে উপস্থিত থেকে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারলে জীবনের খাতায় একটি ইতিহাস হয়ে থাকত। অনেকেই মনের চাহিদা মেটাতে কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও পথচারী সেজে প্রকল্প এলাকার সাজ সাজ অবস্থা দেখতে দেখতে হেঁটে গেছেন। আবার অনেকেই অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থি হতে না পেরেও নিজেদের গর্বিত মনে করেছেন। এই প্রকল্পকে ঘিরে প্রতিদিন হাজার হাজার কোটি টাকার লেনদেন হওয়ায় মানুষের জীবন যাত্রার মানের ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। বেকার মানুষ কর্মসংস্থান পেয়েছেন।

অসচ্ছল পরিবার স্বচ্ছল হয়েছে। এলাকায় কাজের ভ’য়া ও দিন মজুরের দাম বেড়েছে। বেড়েছে তাদের চাহিদা। বেশী চাহিদার মূল্য দিয়েও দিন মজুর পাওয়া এলাকায় দুস্কর বর্তমান সময়ে। কেউ কেউ ঈশ্বরদীকে একটুকরো রাশিয়ার সাথে তুলনা করে বলেছেন, বর্তমান সরকারের সময়োযোগী পদক্ষেপের কারনেই আজ ঈশ্বরদীতে কয়েক হাজার সাদা চামড়ার রাশিয়ানদের অবাধ পদচারনা দেখা যায়। রুপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে পরিবেশের উপর প্রভাব না পড়া এবং পরিবেশ বান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদন করে মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পারবে সরকার। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের মঙ্গা এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে এবং ঐ এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন হবে। মানুষের জীবন যাত্রার মানেরও পরিবর্তন হবে ।

এজন্য তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিন কেও বিশেষভাবে অভিনন্দন জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ২০০৮ এর নির্বাচনের স্থির করা লক্ষ এবং ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্ম শত বার্ষিকী পালনের অঙ্গিকার বাস্তবায়ন ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের মধ্য দিয়ে ওয়াদার কথা রেখেছেন। নির্বাচনী ঘোষনা অনুযায়ী দু’টি বিষয় যথাযথভাবে অর্জন করে সরকার সুনাম কুড়িয়েছে। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করায় এবং এসডিজি সফলতার সাথে বাস্তবায়ন করে প্রমাণ করেছে যে, ২০২১ সাল থেকে ২০৪১ সাল এর মধ্যে সরকার বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে। প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু কামনা করে পাবনা-৪ আসনের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস রুপপুর পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করায় চরম আনন্দ ও গর্বিত উল্লেখ করেন বলেন, আমার সাথে ঈশ্বরদী আটঘরিয়ার মানুষও গর্ববোধ করছেন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউনিট-২ এর রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের কারণে।

জাতির জনকের অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়ন করায়
প্রধান মন্ত্রীকে তিনি অভিনন্দনও জানান। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ফাইনান্স কমিটির চেয়ারম্যান এড.রবিউল আলম বুদু প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে বলেন, বিশ্ব মানবতার মাতা জননেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব হয়েছে দেশের
উন্নয়নে এই ধরনের মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু করা। তিনি সঠিক সময়েই প্রকল্পের কাজ শেষ করে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণ করবেন বলে ঈশ্বরদী-আটঘরিয়াবাসী তথা দেশবাসী বিশ্বাস করে। আমি এত বেশী গর্বিত যে, আমার এলাকায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু ও সফলতা কামনা করেন। পাকশী ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিন্টু জানান,আমার অনুভূতি বলে বোঝানো কঠিন। আমি খুবই আনন্দিত। আমার পাকশী এলাকা ব্যাপক উপকৃত হয়েছেন এই প্রকল্পের মাধ্যমে। এলাকায় অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বেড়ে জীবন যাত্রার মানও বেড়েছে। এটি আমাদের বিশেষ পাওয়া । আমি ও আমার পরিবার আনন্দিত হওয়ায় বাড়িতে সবাইকে মিষ্টি মুখ করিয়েছি। পাকশী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান এনামুল হক বিশ্বাস দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমি এই প্রকল্পের জন্য অনেক কিছু করেছি। অথচ প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের দাওয়াত পাইনি। এটা আমার কষ্ট। তবে খুব আনন্দিত যে, প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের প্রকল্প করে দেশবাসীকে উপকৃত করেছেন। এজন্য আজকে আমার পরিবার পরিজন নিয়ে নিজ বাড়িতে বিশেষ খাওয়ার রান্নার আয়োজন করা হয়েছে। পাকশী রেলওয়ে সদর দপ্তর শাখা শ্রমিকলীগ নেতা নজরুল ইসলাম জানান,আমরা রেল শ্রমিকলীগ
খুবই আনন্দিত ও গর্বিত রুপপুর পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করার জন্য। রুপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, রাশিয়ান ফেডারেশন রোসাটমের ডাইরেক্টর জেনারেল মিঃ
এলেস্ক লিখাচেভ । বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচীব মিঃ জিয়াউল হাসান এনডিসি ও প্রকল্প পরিচালক ড.শওকত
আকবর। এসময় পাবনা-৪ আসনের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস,পাবনা-৩ আসনের এমপি মকবুল হোসেন, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফর উল্লাহ, রাজশাহীর ডিআইজি আব্দুল বাতেন,পাবনা জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল,পাবনা পুলিশ সুপার আকবর আলী, পাবনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসম আব্দুর রহিম পাকনসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের
কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।