স্টাফ রিপোর্টার ॥ গত ২০১০ ইং সাল থেকে চলতি ২০২২ ইং সাল পর্যন্ত প্রায় ১২ বছরেও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর রেশন ও ঝুঁকি ভাতা চালু না হওয়ায় বাহিনীতে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাহিনীর কার্যক্রমে খুশি হয়ে গত ২০১৬ সালে রেলওয়ের যাত্রী ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে “রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আইন, ২০১৬” ও “রেলওয়ে সম্পত্তি (অবৈধ দখল উদ্ধার) আইন, ২০১৬” প্রণয়ন করেন। এছাড়া ২০১৬ সালের ২ নং আইনের ধারা-৪ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী এই বাহিনীকে সংবিধানের ১৫২ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গঠিত শৃংখলা বাহিনী হিসাবে ঘোষনা করেন এবং সশস্ত্র দায়িত্ব পালনের ক্ষমতা প্রদান করেন। এছাড়া এই বাহিনীটি রেলওয়ে সম্পদ চুরির ক্ষেত্রে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার, অধিক্ষেত্র সম্পন্ন আদালতে চালান দেওয়া ও মামলা প্রসিকিউশনের জন্য ক্ষমতাবান হয়ে প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্পসংখ্যক সদস্যরাই সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এ অবস্থায় অন্যান্য সব বাহিনীতে রেশন ও ঝুঁকি ভাতা চালু থাকলেও এই বাহিনীতে চালু না থাকায় দীর্ঘ দিনের পূঞ্জির্ভত ক্ষোভ যে কোন সময় বিস্ফোরণে রুপ নিতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় বাহিনীর সকল পর্যায়ের সদস্যদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করা হয়েছে। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর পশ্চিম ও পূর্ব াঞ্চলের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানাগেছে।
সূত্রমতে,যুদ্ধ বিদ্ধস্ত নব্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত বাংলাদেশের রেল ব্যবস্থা পূনর্গঠনের লক্ষ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ১৯৭২ সালের ১ সেপ্টেম্বর তারিখে রেলওয়ে কমিশন গঠন করা হয়। তাঁর নির্দেশনায় গঠিত কমিশনের সুপারিশের প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে রেল সম্পদের নিরাপত্তার জন্য রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী গঠিত হয়। বাহিনীটি প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম সংখ্যক জনবল দিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে দেশে রেল সম্প্রশাসনের পর এই বাহিনীর কাজ বৃদ্ধি এবং সদস্য সংখ্যাও বাড়তে থাকে। কাজ বৃদ্ধির সাথে সাথে ঝুঁকির পরিমাণও বাড়তে থাকে এই বাহিনীর মধ্যে। রেলপথ সম্প্রসারণের কারণে বর্তমানে এই বাহিনীর দায়িত্বও অনেক গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু বাহিনীর সদস্য সংখ্যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম রয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে এক সদস্যকে অমাণবিকভাবে তিনশিপ্ট করে ডিউটি করতে হয়। বর্তমানে দেশের পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের ছয় বিভাগে মোট ৩৪৫৫ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন যা মোট চাহিদার তুলনায় তিনভাগের দুইভাগ পরিমাণ। অর্থাৎ তিনভাগের একভাগ পরিমাণই ঘার্তি রয়েছে। এরপরও নিরলসভাবে রেলওয়ে সম্পদের যথাযথ নিরাপত্তা দিয়ে আসছে এই বাহিনীর সদস্যরা। রেলওয়ের বিভিন্ন কারখানা, ডিপো, গোডাউন, সিক লাইন, জংশন, ইয়ার্ড, রেক/কোচ, অফিসসমূহ, বুককৃত মালামাল ও জ্বালানী ইত্যাদির নিরাপত্তা দেওয়া এই বাহিনীর প্রধান কাজ। এ ছাড়া রেলওয়ের স্বার্থে যাত্রী নিরাপত্তাসহ রেলওয়ে অঙ্গণে যে কোন ধরনের বে-আইনী কার্যক্রম প্রতিরোধ, প্রতিহত ও আসামী গ্রেপ্তার করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে বাহিনীটি দেশ সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।
এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাহিনীটির কার্যক্রমে খুশি হয়ে রেলওয়ের যাত্রী ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ২০১৬ সালে “রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আইন, ২০১৬” ও “রেলওয়ে সম্পত্তি (অবৈধ দখল উদ্ধার) আইন, ২০১৬” প্রণয়ন করেন। এছাড়া ২০১৬ সালের ২ নং আইনের ধারা-৪ অনুযায়ী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই বাহিনীকে সংবিধানের ১৫২ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গঠিত শৃংখলা বাহিনী হিসাবে ঘোষনা করেন এবং সশস্ত্র দায়িত্ব পালনের ক্ষমতা প্রদান করেন। এছাড়া বাহিনীটি রেলওয়ে সম্পদ চুরির ক্ষেত্রে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার, অধিক্ষেত্রসম্পন্ন আদালতে চালান দেওয়া ও মামলা প্রসিকিউশনের জন্য ক্ষমতাবান।
এই বাহিনীর সদস্যগণকে সার্বক্ষনিক দায়িত্বরত থাকেন বিধায় কর্মস্থলের পার্শ্ববর্তী ব্যারাকে অবস্থান করতে হয়। এছাড়া গভীর রাতে বিট ওয়াইজ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রয়শ:ই ডাকাতদলের আক্রমণের স্বীকার হয়ে মারাত্মকভাবে আহত হতে দেখা যায় এই বাহিনীর সদস্যদের।
সূত্রমতে, নিরাপত্তাবাহিনীর সমদস্যদের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে গত ২০২২ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভিন্ন এলাকায় নিহত হয়েছেন ১৯ জন সদস্য, পঙ্গু হয়েছেন ২ জন, গুরুতর আহত হয়েছেন ৫১ জন, জখম হয়েছেন ১ জন এবং আহত হয়েছেন ১৮১ জন সদস্য। কিন্তু দেশের অন্যান্য শৃংখলা বাহিনীর ন্যায় এই বাহিনীতে রেশন ও ঝুঁকি ভাতা চালূ না থাকায় সদস্যদের মধ্যে বর্তমানে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে এবং দায়িত্ব পালনে মনোবল ও কর্মস্পৃহা দিনে দিনে লোপ পাচ্ছে।
২০১০ সাল থেকে এই বাহিনীর পক্ষ থেকে রেশন ও ঝুঁকি ভাতার জন্য প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিন্তু দুই ধরনের ভাতা (রেশন ও ঝুঁকি) একই সংগে উত্থাপন না করে, যে কোন একটি ভাতা পাবার জন্য কার্যক্রম চালু রাখার বিষয়ে সে সময়ে সুপারিশ করা হয়। তারপর ঝুঁকি ভাতা পাবার বিষয়টি সামনে আসায় বাহিনীর সংশ্লীষ্ট দায়িত্বশীল অফিস থেকে পত্রালাপ শুরু হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালে অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘ঝুঁকি ভাতা’ প্রদানের বিষয়ে ’অসম্মতি’ জ্ঞাপন করা হয়। কিন্তু যেহেতু নিরাপত্তাবাহিনী একটি শৃংখলা বাহিনী এবং অস্ত্রসহ দায়িত্ব পালন করতে হয়, সেজন্য এই বাহিনীটি অন্যান্য বাহিনীর ন্যায় রেশন ও ঝুঁকি ভাতার ন্যায্য দাবীদার হিসেবে পরিগণিত হয়। এ কারণে অধিকতর যুক্তিসহ রেলপথ মন্ত্রণালয় কর্তৃক অর্থ মন্ত্রণালয়ের উক্ত সিদ্ধান্ত পূন:বিবেচনা করার জন্য গত ২০২২ সালের ৩০ জুন তারিখে উক্ত প্রস্তাবনা পূনরায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। এরপরও অদ্যবধি কোন সফল পাওয়া যায়নি। এঅবস্থায় এই বাহিনীটির সকল স্তরের সদস্যরা মানবতার মাতা, গণতন্ত্রের মানসকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
Leave a Reply