স্টাফ রিপোর্টার ॥ রেলওয়ে পাকশী বিভাগের সবচেয়ে বেশী রাজস্ব লোকসানকারী ঢাকাগামী সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিন রুমের ভিতর থেকে রিহার্সেল হ্যান্ডেল চুরি হয়েছে ।
ট্রেনটি রেলওয়ে পাকশী বিভাগের সিরাজগঞ্জ বাজার ষ্টেশনে অবস্থানকালে রবিবার আনুমানিক সকাল ছয়টায় এই রিহার্সেল হ্যান্ডেল চুরি হয়। এতে নির্দিষ্ট সময় সকাল ছয়টায় ট্রেনটি ছেড়ে যাবার কথা থাকলেও সাড়ে তিনঘণ্টা পর সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এতে ট্রেনের কয়েক শতাধিক যাত্রীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। টানা তিন দিন ছুটির পর যে সব যাত্রী ঢাকায় অফিস করতে সিরাজগঞ্জ থেকে ট্রেনে উঠেছিলেন তারাও চরম হতাশায় ভুগছিলেন।
রিহার্সেল হ্যান্ডেল চুরির ঘটনায় রেলওয়ে বিভাগীয় পাকশীর ব্যবস্থাপক শাহিদুল ইসলামের নির্দেশে পাকশীর এটিও সোবহানকে আহবায়ক করে চার সদস্যের তদন্ত টিম গঠণ করা হয়েছে। একই সাথে তদন্ত টিমকে আগামি সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন ড্রাইভার রবিউল ইসলাম জানান, ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি রাত সাড়ে দশটায় সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশনে এসে পৌঁছে। এরপর ট্রেনের জানালা দরজা বন্ধ রেখে তিনি সহ সকল স্টাফরা বাসায় চলে যান। সকালে ট্রেনের ইঞ্জিন চালু করতে গিয়ে দেখা যায় রিহার্সেল হ্যান্ডেল নেই।
পরে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে দ্রুত ঈশ্বরদী থেকে রিহার্সেল হ্যান্ডেল পাঠানোর জন্য বলা হয়। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে রিহার্সেল হ্যান্ডেলটি পৌঁছালে ইঞ্জিনটি পুরোপুরি সচল করে জামতৈল স্টেশন থেকে সাড়ে নয়টার দিকে ট্রেনটি ছেড়ে দেয়া হয়।
সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের পরিচালক হাবিবুর রহমান জানান, রিহার্সেল হ্যান্ডেলটি চুরি হওয়ার কথা না। কারণ নিয়মানুযায়ী ইঞ্জিন বন্ধ করার পর হ্যান্ডেলটি ড্রাইভারের সাথে নিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু ট্রেন চালক তা করেননি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে বলেও তিনি জানান।
সিরাজগঞ্জ জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম জানান, চুরি হওয়ার কোন তথ্য আমাদেরকে জানানো হয়নি। আমাদেরকে বলা হয়েছিল ইঞ্জিনে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। পরে জেনেছি রিহার্সেল হ্যান্ডেল চুরি হয়েছে। তবে এবিষয়ে কোন অভিযোগ বা জিডি করা হয়নি। অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে সিরাজগঞ্জ-ঢাকা গামী ট্রেনটি আগে ঈশ্বরদী থেকে সিরাজগঞ্জ হয়ে ঢাকার মধ্যে চলাচল করতো। সে সময় প্রচুর যাত্রী হতো। কিন্তু রেলেওয়ের উচ্চ পর্যায়ের একটি চক্রের তদ্বিরে প্রায় দু’বছর আগে ঈশ্বরদী থেকে ট্রেনটিকে তুলে নিয়ে সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকার মধ্যে চালানো হচ্ছে। এর পর থেকে প্রতিদিন রেলওয়ে কর্তপক্ষকে প্রায় এক লাখ টাকা করে লোকসান গুণতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সিরাজগঞ্জ থেকে ট্রেনটি চালু করার পর থেকে সিরাজগঞ্জ স্টেশন ইয়ার্ডে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে চলেছে। অতিসম্প্রতি মালগাড়ি থেকে গম চুরি করার সময় বাধা দেওয়ায় রেলওয়ে নিরাপত্তাবাহিনীর দু’সিপাহীকে ছুরিকাঘাত করে মারাত্মক জখম করা হয়। রাজস্ব লোকসান থেকে রক্ষা পেতে ও যাত্রীদের সুবিধা বৃদ্ধিতে ট্রেনটিকে পুণরায় ঈশ্বরদী থেকে সিরাজগঞ্জ হয়ে ঢাকার মধ্যে চালানোর জন্য সম্প্রতি রেলপথ মন্ত্রীর নিকট আবেদন করা হয়েছে। শুধু যাত্রী নয়,স্বয়ং রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারিরাও ট্রেনটিকে পুণরায় ঈশ্বরদী থেকে চালানোর পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন।
Leave a Reply